Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মিশ্রচাষে তারা বাইম অধিক লাভের নিশ্চয়তা দেয়

মিশ্রচাষে তারা বাইম অধিক লাভের নিশ্চয়তা দেয়
মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে বিশে^র অন্যতম প্রধান মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। এফএও অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশে^র ৬ষ্ঠ বৃহত্তম মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। জাতীয় আয় ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মৎস্য চাষ ও খাদ্যাভাস গড়ে তোলার প্রভাব রয়েছে। মৎস্যখাত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি। আর এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে তারা বাইম চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ মাছ অধিকাংশ সময় গলিত ও পচা জৈব পদার্থ খেয়ে বড় হয়। এ মাছ পানির তলদেশে কাদার ভেতর লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। এ মাছ সাধারণত প্রবাহমান এবং স্থির স্বাদু পানিতে বাস করে এবং ছোট আকারের খাল-নদী, জলাধার, বিল-প্লাবনভূমিতে এবং পুকুর-দীঘিতে বসবাস করে। কচুরিপানা তথা জলজ আগাছার মধ্যে ডিম দেয়। বর্তমান সময়ে তারা বাইম মাছ সাথী ফসল হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হচ্ছে। হ্যাচারিতে এ মাছের প্রণোদিত প্রজনন সম্ভব হয়েছে এবং বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রজাতির মাছের ভেতরে এ মাছটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব খুবই বেশি। সুস্বাদু এ মাছ বেশ জনপ্রিয় এবং বাজারে বেশ চড়া দামে বিক্রয় হয়। এ মাছ দৈর্ঘ্য প্রায় ২০-২৫ সেমি. হতে দেখা যায়। তারা বাইম মাছ সর্পিলাকার, শরীরের রং হলুদাভ হয়ে থাকে এবং এ মাছের লেজের দিকে গোলাকার তারার মতো কালো দাগ থাকে বলে এ মাছটিকে তারা বাইম নামে ডাকা হয়।
তারা বাইম মাছ চাষের সুবিধা
এ মাছটি চাষের বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে যেমন- এ মাছটি রাক্ষুসে স্বভাবের নয় বিধায় অন্য মাছের সাথে, মিশ্রভাবে চাষ করা যেতে পারে; এ মাছের অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত সমস্যা তেমন হয় না; বর্তমানে এ মাছের পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে; সাথী ফসল হিসেবে বাড়তি খাবার ছাড়াও চাষ করা যায়।
চাষের পুকুর নির্বাচন : মাছচাষের সফলতা, সঠিকভাবে চাষের জলাশয় নির্বাচনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তারা বাইম মাছ ছোট বড় সব ধরনের পুকুরে চাষ করা যেতে পারে। তবে ছোট পুকুরেই চাষ করা ভাল। তারা বাইম মাছ পুকুরের তলদেশে কাদার ভিতর থাকে বিধায় এ মাছ ধরার জন্য পানি সেচের প্রয়োজন হয়। পুকুরের পাড় যথেষ্ট চওড়া হতে হবে যাতে বর্ষার সময় মাছ কাকড়ার গর্ত দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে। পুকুরের পানির গভীরতা ৪-৫ ফুট হতে হবে। স্বল্প গভীর পুকুরের তলদেশে সূর্যের আলো প্রবেশ করে যা তারা বাইম মাছ সহ্য করতে পারে না। পুকুরটি মাঠের মধ্যে খোলামেলা স্থানে হলে ভাল হয়। পুকুরের তলদেশ বালুকাময় বা কিছুটা কাদা থাকাতে হবে কারণ এ মাছ স্বভাবগতভাবে কাদার ভেতরে অবস্থান করে। তবে ৫-৬ ইঞ্চির বেশি অতিরিক্ত কাদা থাকা ঠিক নয়।
চাষের পদ্ধতি নির্ধারণ : লাভজনক মাছ চাষের জন্য সঠিক মাছ চাষ পদ্ধতি নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সঠিকভাবে পুকুর নির্বাচনের পরে চাষের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। তারা বাইম মাছচাষের বিষয়ে যতটুকু জানা গেছে তাতে এ মাছ এককভাবে চাষ করার চেয়ে অন্য মাছের সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করায় ভাল। এ মাছ পানির তলদেশে বাস করে। একক চাষ করলে পুকুরের উপরের স্তরসমূহ অব্যবহৃত থেকে যাবে। যারা এ মাছচাষে সফল হয়েছেন তারা সকলে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করেছেন। সাধারণভাবে রুইজাতীয় মাছ, পাবদা-গুলশা, গলদা চিংড়ি ও তেলাপিয়া মাছের সাথে এ মাছচাষ করা যেতে পারে। যে সকল মাছ চাষের সময় পুকুরের পানি অধিকতর সবুজ হয়ে যায় (যেমন থাই কৈ, পাংগাস ইত্যাদি) সে সব মাছের সাথে তারা বাইম মাছ চাষ না করা ভাল।
চাষের পুকুর প্রস্তুতি : আগেই উল্লেখ করা হয়েছে তারা বাইম মাছের একক চাষের তেমন প্রচলন নাই। সাধারণত রুইজাতীয় মাছের সাথে মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। কার্পজাতীয় মাছের চাষের জন্য যেভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হয় সেভাবেই এ মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ করে পুকুরের ভেতরের পাড় ভালভাবে মেরামত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পুকুরের পাড়ে যেন কোন সুড়ং বা গর্ত না থাকে। পুকুরে পানি প্রবেশের বা বের করে দেবার জন্য কোন প্রকার নালা রাখা যাবে না। কারণ নালার মুখে যত ঘন নেটের বেড়া দেয়া হোকনা কেন তারা বাইম মাছ ছোট ফাঁক দিয়েও বের হয়ে যেতে পারে। পুকুর সেচ দিয়ে সকল ধরনের মাছ ধরে ফেলতে হবে এবং সুযোগ থাকলে পুকুরটি শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর নিয়মমাফিক শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে তবে পুকুর সেচ দিয়ে তৈরি করলে পানি প্রবেশের আগে ৫০০ গ্রাম এবং পানি প্রবেশের পরে বাকি ৫০০ গ্রাম চুন পানিতে ভাল করে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুুকুরের পানির গভীরতা ৪-৫ ফুট রাখতে হবে। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পরে শতকপ্রতি ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৫০ গ্রাম হারে টিএসপি প্রয়োগ করে পুকুরে মাছের জন্য             প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন করে নিতে হবে।
পুকুরের ভেতরের পাড় ঘেঁষে নেট স্থাপন : যেসব পুকুরের পাড় যথেষ্ট চৌড়া নয় বা যেসব পুকুরের পাড় নিরাপদ নয় বলে মনে হলে পুকুরের পাড়ের ভেতরের অংশে নীল নেট পাড় ঘেঁষে সুন্দরভাবে আটকিয়ে দিতে হবে। আবার এখানে উল্লেখ থাকে যে তারা বাইম সাধারণত পুকুরের পাড়ের গর্ত দিয়ে বের হয়ে যাবার প্রবণতা আছে এবং এরা দিনের বেলা নিজেকে গর্তের ভেতর বা আবর্জনা ও ডুবন্ত জলজ আগাছার নিচে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। অর্থাৎ এ মাছ আলোর আড়ালে থাকতে পছন্দ করে এ জন্য পুকুরের এক পাশে কিছু কচুরীপানা রাখা যেতে পারে। যাতে প্রয়োজনের সময় এ মাছ তার তলে আশ্রয় নিতে পারে। তা ছাড়াও এ মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে পুকুরের তলদেশে ভাংগা হাড়ি, প্লাস্টিকের বিভিন্ন আকারের পাইপ, বাঁশ বা বাঁশের কুঞ্চির আঁটি দেয়া যেতে পারে।
পোনা মজুদ : মূল মাছের পোনা মজুদের কয়েক দিন পরে তারা বাইম মাছের পোনা মজুদ করতে হবে। বর্তমানে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় এ মাছের পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। আগে দাম বেশি থাকলেও বর্তমানে বেশ কম দামে এ পোনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে। সাথী ফসল হিসেবে চাষ করলে ৩৩ শতক পুকুরে ৩-৪ হাজার পোনা দেয়া যেতে পারে। তবে এর বেশিও ছাড়া যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশে বাস করে যেমন মৃগেল, কার্পিও, বাটা এ ধরনের মাছ কম ছাড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে একয় আয়তনের পুকুরে ১০ হাজারটি পর্যন্ত ছাড়া যেতে পারে। চেষ্টা করতে হবে পুকুরে ২-৩ ইঞ্চি আকার বা তার বড় আকারের পোনা মজুদ করার জন্য।
মাছের খাদ্য প্রদান : সাধারণত পুকুরে মূল যে মাছ চাষ করা হচ্ছে সে মাছের জন্য খাবার দিলে চলে। খাবার হাতে বানানো ভিজা খাবার, বাজারের পিলেট খাবার যে কোন খাবার দেয়া যেতে পারে। তবে পাবদা হলে উক্ত মাছের জন্য বাজারে যে ভাসমান খাবার পাওয়া যায় সে খাবার ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা বাইম মাছের জন্য আলাদা খাবার দিতে হয় না। তবে অধিক হারে ছাড়লে (৩৩ শতকে ৩-৪ হাজারের বেশি) তারা বাইম মাছকে আলাদা খাবার দিতে হবে। তারা বাইম মাছ পুকুরের তলদেশে বাস করে এবং এরা ডুবন্ত খাবার খেতে পারে। এ মাছের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা নিশাচর (ঘড়পঃঁৎহধষ ঋববফরহম ঐধনরঃং) মাছ সাধারণত এরা রাতে এবং খুব ভোরে খাবার সংগ্রহ করে। এ জন্য এদের সন্ধ্যার পরে এবং ভোর রাতে খাবার দিতে হবে। বাজারে প্রাপ্ত ৩০% আমিষ সমেৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে চিংড়ির জন্য ব্যবহৃত পিলেট খাবার এদের জন্য খুবই উপযোগী। সন্ধ্যার পরে পুকুরের কিনার ঘেঁষে অগভীর অংশে খাবার দিতে হবে। এ মাছ প্রাকৃতিকভাবে জৈব পচনশীল দ্রব্য খায় এ জন্য পুকুরে মাঝে মধ্যে অর্ধপচা কচুরিপানা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ জন্য পুকুরের এক কর্নারে পানির উপরের অংশে কচুরিপানা বা টোপাপানা মজুদ করে কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে অর্ধপচা কচুরিপানা পাওয়া যেতে পারে। এটি কার্পজাতীয় অনেক মাছেও খেয়ে থাকে।
অন্যান্য পরিচর্যা : মাছকে নিয়মিত খাবার প্রদানের পাশাপাশি পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের উপস্থিতির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য নিয়মিত বিরতিতে পুকুরে ইউরিয়া ও টিএসপি সার দিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রচুর্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রিবায়োটিক্স তথা শতকে ১৫০ গ্রাম অটোকুড়া, ১৫০ গ্রাম চিটাগুড় এবং ৫ গ্রাম ইস্ট পর্যাপ্ত পানিতে ২৪-৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পুকুরে প্রয়োগ করা। প্রিবায়োটিক্স প্রয়োগ করলে পুকুরে প্রচুর পরিমাণে জু-প্লাংকটন তৈরি হয় এবং পুকুরের পানিতে এ্যামোনিয়াজনিত সমস্যা দূর হয়।
সতর্কতা : বর্ষার পানিতে পুকুরের পানি বেড়ে গেলে এ মাছ বের হয়ে যাচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে হবে। পুকুরের পাড়ের গর্ত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পুকুরের পানি গাঢ় সবুজ হয়ে যাওয়াটা সব সময় মাছচাষের জন্য ক্ষতিকর এ জন্য এ মাছের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টিতে নজর রাখতে হবে। চাষ চলাকালে চুন প্রয়োগের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে শতকে ১০০-১৫০ গ্রামের অধিক চুন প্রয়োগ না করা ভাল।
মাছ আহরণ : তারা বাইম মাছ ধরা কঠিন বলে অনেকের মনে করে থাকেন। এ মাছ ধরার জন্য ভোর বেলা অন্ধকার থাকা অবস্থায় জাল দিয়ে প্রায় ৫০% পর্যন্ত মাছ ধরা যায়। বাকি মাছ পুকুরের পানি সেচ দিয়ে ধরতে হয়। পুকুর সেচ দিলে পুকুরের তলার নিচু অংশে কাদার ভেতর এ মাছ জমে। এ কাদা অংশে ইউরিয়া তুতের সাথে পানিতে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে অথবা মাছ মারার জন্য ব্যবহৃত রোটেনন পাউডার পানির সাথে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে তা হলে সমস্ত মাছ কাদা থেকে বের হয়ে আসবে এবং পুকুর থেকে শিং মাছ ধরার অনুরূপে মাছ ধরতে হবে।
মাছচাষে আগের মতো আর লাভ হচ্ছে না ঠিকই কিন্তু এর মাঝেও অনেকে সফলতার সাথে মাছচাষ করছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। বর্তমান সময়ে একটু চিন্তাভাবনা করে মাছচাষে যারা সফল হচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বুঝে বুদ্ধিমত্ত্যার সাথে মাছ চাষ করলে অবশ্যই মাছচাষে লাভবান হওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। মনে রাখতে হবে নতুন প্রজাতির মাছচাষের হাত ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি গোষ্ঠী জীবনের সফলতা নিশ্চিত করেছেন। সময়  মতো সুযোগ গ্রহণ না করে যখন সকলে চাষ শুরু করবে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে সে মাছের দাম কমিয়ে দেয় তখন আর চাষ করে অন্যদের মতো আর্থিক সফলতা অর্জন করা যায় না।

লেখক : বিভাগীয় উপপরিচালক (অব.), মৎস্য অধিদপ্তর, মোবাইল : ০১৭৫১৯৩৯৯৩২, ই-মেইল : ঃtofaz2010@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon